এনএনবি নিউজ
বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে গত দুদিন থেমে থেমে বৃষ্টি আর জোয়ার পানিতে বাগেরহাটের নিম্নঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে সদর উপজেলার তিনটি গ্রামের পাঁচ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
এছাড়া বৃষ্টি আর জোয়ার পানিতে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে ও জেলার করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্র তলিয়ে গেছে।
পূর্ব সুন্দরবনের করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির জানান, গত দুই দিন ধরে জোয়ারের পানিতে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সোমবার পর্যন্ত সুন্দরবনের প্রধান প্রধান নদ-নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে চার থেকে পাঁচ ফুট পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। কমরজলে পানির উচ্চতা ছিল চার ফুট।
“সম্প্রতি সময়ে নদীতে যেহারে পানি বাড়ছে তাতে সুন্দরবনের প্রাণিকুল হুমকির মুখে পড়ছে। বনের বাঘ, শূকর, হরিণ, বানর সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে,” যোগ করেন তিনি।
এই প্রাণিকুল রক্ষায় সরকারকে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মনে করছেন এই বন কর্মকর্তা।
বাগেরহাট সদর উপজেলার উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোছাদ্দেরুল ইসলাম বলেন, তার উপজেলার তিনটি গ্রামের অনন্ত পাঁচ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তাদের দ্রুতই খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে।
এদিকে সদর, মোরেলগঞ্জ, মোংলা ও রামপাল উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা জানান, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম এলে জোয়ারের পানি উঠে তাদের ভোগান্তির শেষ থাকে না। রান্না খাওয়ার অসুবিধায় পড়েন তারা।
এ সমস্যা সমাধানে ভৈরব নদের ওপর টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তারা। আর দ্রুতই বাঁধ নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, “বঙ্গোপসাগরে নি¤œচাপের প্রভাবে জোয়ার ও অব্যাহত বৃষ্টিতে সদর, মোরেলগঞ্জ, রামপাল ও মোংলা উপজেলার নদী তীরবর্তী নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। কয়েকশ পরিবার সাময়িকভাবে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।”
এসব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা তৈরি করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের দির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তালিকা তৈরির পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
বাগেরহাট কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. আজিজুর রহমান বলেন, গত দুই দিনে জেলায় ৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর মধ্যে ফকিরহাট উপজেলায় একদিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে ৫২ মিলিমিটার।
“বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি জমে বেশকিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে শীতকালিন সবজিক্ষেত নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। দ্রুত এই পানি নেমে না গেলে চাষিদের ক্ষতি হবে। ”
তবে এই বৃষ্টিতে রোপা আমন ধানের দারুণ উপকার হচ্ছে জানিয়ে এ কৃষি কর্মকর্তা বলেন, জেলায় ইতোমধ্যে ৮৭ ভাগ জমিতে রোপা আমন ধান রোপন শেষ হয়েছে। বাগেরহাট জেলায় চলতি মৌসুমে ৭৪ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে।
বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, “মোরেলগঞ্জের পৌরসভা অংশে জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে উচ্চ জোয়ারে প্লাবিত হচ্ছে। ওই অংশে নদীতীর প্রতিরক্ষার জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। নদীতীর সংরক্ষণের কাজ চলতি অর্থ বছরে শুরু করা হবে।
“জোয়ারের পানি ওঠা রোধ করতে মোরেলগঞ্জ উপজেলার জন্য ৯৫ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা প্রয়োজন। এরজন্য চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের একটি প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ওই বাঁধ নির্মাণ হলে পাশ্ববর্তী রামপাল ও মোংলা উপজেলারও জোয়ারের পানি প্রতিরোধ হবে।”
এছাড়া বাগেরহাট সদরের জোয়ারের পানি ঠেকাতে জাইকার অর্থায়নে নদীতীর প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজ খুব দ্রুতই শুরু হবে বলে জানান পাউবি কর্মকর্তা।
COMMENTS