সাজ্জাদ হোসেন দোদুল
একটি প্রেমপত্র লিখেছি প্রিয় ভালোবাসাকে দেবো বলে।
কৈশোর যৌবনের আবেগে রঙিন কাগজে। দামি কলমে।
ব্র্যান্ডেড পারফিউম মেখে। পাপ্পা মিলানের পাঁপড়ি ছড়িয়ে।
বন ময়ূরের পেখম দিয়ে খুব যত্ন করে রেখেছি প্রেমপত্রটি।
যার জন্য লিখেছি সে কি গ্রহণ করবে আমার এ পত্র ? হয়তো না !!!
তারপরও লিখেছি সব জেনে বুঝেই লিখেছি।
ভালোবাসার ব্যাকুলতাকে আটকাতে পারেনি !!!
প্রেমপত্রটি লিখার আগে হৃদয়কে বারবার শাসন করেছি।
কিন্তু কোন শাসনেই হৃদপিণ্ড আমার সাড়া দেয়নি।
পত্রটি কোনদিনও দেয়া হবে না জেনেও লিখেছি। নির্লজ্জভাবে লিখেছি।
ভালবাসলে নাকি মানুষ বোকা হয়ে যায়। বেহায়া হয়ে পড়ে।
আমি অন্য সব ব্যর্থ মানুষের মতো একই সারিতে আছি।
কি করে দেবো পত্রটি ?
তাঁর গন্তব্য আমি জানিনা। তাঁর ঠিকানাও আমার জানা নেই।
আমার সাথে তার যোগাযোগের কোন মাধ্যম নেই। নেই পত্র দেয়ার কোন বাহক ।
পোস্টকোড নেই। ইমেইল আইডি নেই। কবুতর ঈগলের মত কোন বাহন নেই।
অপেক্ষায় আছি । প্রতীক্ষায় আছি।
সামনের বছর দেবী দুর্গা যে বাহনে আসবেন তাকে একবার অনুরোধ করবো
আমার পত্রটি প্রিয়তমোর কাছে পৌঁছে দিতে ।
কিন্তু দেবীর বাহন কি ভক্তের পুজোর থালা প্রসাদের আশীর্বাদ বাদ দিয়ে,
আমার মত অতি ক্ষুদ্র মানুষের একটি নগণ্য প্রেমপত্রের বাহন হবেন ?
কেন হবেন না নিশ্চয়ই হবেন। দেবীর কাছে তাঁর সকল ভক্ত সমান।
কেন বুঝবেনা ভক্তের দুঃখ বেদনা ?
শুনেছি প্রেম স্বর্গ থেকে আসে। নিশ্চয় আমার প্রেমটাও স্বর্গীয় ? ষোল আনাই নিখাদ।
না না আমার হয়তো কিছুটা ভুল হচ্ছে। সব প্রেম বোধ হয় স্বর্গের হয়না।
ইশ্বর তুষ্টির জন্য প্রসাদ চায়, বলি চায়, কোরবানী চায়, সহি ইবাদত চায়।
এই জীবনে আমার প্রবেশ নেই। পাপের কানায় কানায় ভরা আমি।
প্রভুকে তুষ্ট করার সামর্থ্য আমার নেই। আমার কথা কেন শুনবেন ইশ্বর ?
তাছাড়া আমি অষ্পৃশ্য। নমঃশূদ্র আমার প্রবেশাধিকার সংকীর্ণ।
আমিতো বেছে নিয়েছি ভালোবাসার ধর্ম। সেই প্রেম ধর্মের পূর্ণ প্রার্থনা করতে পারিনি।
দেবী কি করে আমার প্রতি প্রসন্ন হবেন ? আমি রুদ্রাক্ষের মালা জড়িয়ে।
ত্রিশূলে লাল সালু পেঁচিয়ে তান্ত্রিক হইনি। ভোগে আমার বিশ্বাস না।
আমি যোগী ত্যাগে স্থাপন করেছি বিশ্বাস। ভালোবাসায় ত্যাগ না থাকলে কি বড় প্রেম হয় ?
পত্রটি দিতে না পারার আফসোস হয়তো বাউলা মনে রয়ে যাবে চিরকালের। নিশ্চয় তাই। দৃশ্যমান ভবিষ্যত।
প্রিয়তমো কতদুরে আছো তুমি আমি জানিনা। তবে ইশ্বরের দিব্য দিয়ে বলছি।
দুরত্ব যতই থাকুক আমার হৃদপিণ্ডের প্রতিটি রক্ত কনায় তোমার বসত।
আমার শরীরের প্রতিটি ভাঁজে ভাঁজে তোমার অস্তিত্বের জানান।
এখনো বাতাসে তোমার গন্ধ পাই। ইথারে শুনতে পাই তোমার হাসির শব্দ। গানের কন্ঠ।
উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিম সবদিকে। তাই ঠাহর করতে পারিনা তোমার অবস্থান কোন সীমানায়।
তুমি একবার ইথারে কান পাতলে শুনতে পাবে গভীর রাতে বালিশ চাপায় আমার গুমরে কাঁদার বিষন্ন শব্দ।
অস্থির ফুসফুসের দীর্ঘশ্বাস। যন্ত্রনায় দগ্ধ ক্লান্ত হতাশার নিঃশ্বাস।
আমি নিগৃহিত অবহেলায় একজন নিষিদ্ধ প্রেমিক। শর্ত ছাড়াই তোমার নামে লিখে দিয়েছি নিজের জীবন।
তবু বিশ্বাস রাখতে পারোনি। অবিশ্বাসের নগ্নতায় ভাসিয়ে দিয়েছো সারাক্ষণ ।
তবু অদৃশ্য কোন কাব্যে বেঁধে রেখেছো কোন টানে ? তোমার ভাবনায় যবুথবু হয়ে পড়ে থাকি।
প্রতিদিন শতসহস্র বার মরে যাই নিজের মাঝে নিজে। দিনের পর দিন সূর্যের আলো দেখিনা।
জানালার পর্দা সরালেই বিশাল কাচ ভেদ করে চাঁদ দেখতে পাই। কিন্তু দেখিনা।
ভাঙ্গা হৃদয় আরো ভেঙ্গে যাবে, তাই চাঁদের দিকে তাকাই না। আমি জানি জোছনায় তোমার উপস্থিতি নেই।
আমার শরীরের বাইরের অংশ হয়েছে ফ্যাকাসে বিবর্ণ। কষ্টে কষ্টে ভেতরটা হয়েছে যানবাহনের কালো ধোঁয়ার চেয়েও কালো।
বেদনার ভারে আমি ছোট হতে হতে বার্মিংহামে পরিণত হয়েছি।
পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুদ্র প্রাণ বার্মিংহাম তাঁর প্রেমকে আকর্ষণ করতে প্রতি সেকেন্ডে আশিবার ডানা ঝাপটাতে পারে।
কষ্টের নিলামে, বেদনার ভারে, এখন আমি এতোটাই ছোট হয়ে পড়েছি,
হয়তো তোমাকে আলিঙ্গনের জন্য সেকেন্ডে একবারও বাহু দুটি প্রসারিত করতে পারবোনা।
আমি আজ তোমার কাছে নদীর ঘোলা জলের মতো অস্পষ্ট। তাই আমাকে চিনতে পারছোনা।
নদীর কোনায় কোনায়া স্রোতের ঝাপটায় চক্কর খেতে খেতে পাকে আটকা পড়েছি। ঠিক একটি কচুরিপানা পাঁকে আটকে গেলে যেমনটি দেখায়।
তবু তোমাকে দেবো বলে যে প্রেমপত্রটি লিখেছি একটুও ভিজে নষ্ট হতে দেইনি।
পলিব্যাগে মুড়িয়ে খুব যত্ন করে রেখেছি। আমি আহত। পত্রটি অক্ষত।
কোনদিন যদি পাকের চক্কর থেকে সাঁতরে পাড়ে উঠে আসতে পারি,
আবারও প্রেমপত্রটি নিয়ে ঘুরবো উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিমে। তোমাকে দেয়ার প্রতীক্ষায়।
COMMENTS